Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভূমি বিষয়ক তথ্য

ভূমি রেজিষ্ট্রেশন

সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়কে স্থায়ী করে রাখবার একটি চমৎকার উপায় হইতেছে রেজিষ্ট্রেশন আইন। সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় মৌখিকভাবে হতে পারে। আবার লিখিত দলিল দ্বারাও হতে পারে। কিন্তু মৌখিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের বিপদ অনেক। প্রতারিত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সময়ের সাথে সাথে সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলে অনেকেই লোভ সম্বরণ করতে না পেরে ছলে বলে এবং কৌশলে কি করে অন্যের সম্পত্তি আত্মসাত করা যায় তার প্রচেষ্টা চালায়। যিনি সম্পত্তি বিক্রয় করেন তিনি লোভের বশবর্তী হয়ে বিক্রয়টি অস্বীকার করিতে পারেন বা সম্পূর্ণ বিক্রয় মূল্য পান নাই বলে আপত্তি উপস্থাপন করতে পারেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে সম্পত্তি মৌখিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের বিপদ অনেক। কিন্তু লিখিত দলিল দ্বারা সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করলে বিপদ অনেক কম থাকে। এমনকি প্রতারিত হবার সম্ভাবনাও কম থাকে। কেননা লিখিত দলিল মৌখিক দাবীর চাইতে মূল্যবান এবং অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। লিখিত দলিল থাকলে মিথ্যা দাবী তুলে ক্রয়-বিক্রয় অস্বীকার করিয়া সুবিধা করা যায় না। কিন্তু লিখিত দলিল কি সব সময় নিরাপদ? না তাও নয়। কেননা লিখিত দলিল দ্বারাও প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে। দলিল লিখিয়া তাহা দশ পনের বৎসর পূর্বে সম্পাদিত হয়েছিল। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় লিখিত দলিল দ্বারা হলেই যে বিপদের আশংকা থাকে না, তা নয়। এই আশংকা দূর করবার বিধান রেজিষ্ট্রেশন আইনে দেওয়া হয়েছে। যাহাতে লিখিত দলিলের পিছনের তারিখ দিয়া দলিল রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া সম্ভব না হয়। কারণ এই আইনে দলিল সম্পাদনের চার মানের মধ্যেই রেজিষ্ট্রির জন্য দলিল দাখিল করার বিধান দেওয়া হয়েছে। লিখিত দলিল হারিয়ে যাইতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অপাঠ্য বা অস্পষ্ট হয়ে পড়িতে পারে। কিন্তু দলিলখানি যদি রেজিষ্ট্রি হইয়া থাকে তা হলে সহজেই ঐ দলিলের নকল নেওয়া যেতে পারে। রেজিষ্ট্রেশন আইনের বলেই তা সম্ভব হয়েছে। বহু বৎসরের অতিকভজ্ঞতার ফসল এই রেজিষ্ট্রেশন আইন। ডোমার উপজেলা থেকে চিলাহাটির দুরত্ব ২০ কিঃমিঃ। ফলে দুরত্ব বিবেচনা করে চিলাহাটিতে একটি সাব রেজিষ্ট্রি অফিস রয়েছে যেখানে সপ্তাহে ৪ দিন জমি রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। ডোমার উপজেলায় মোট ২ টি সাব রেজিষ্ট্রি অফিস রয়েছে। রেজিষ্ট্রেশনের ফি নিম্নে উলেস্নখ করা হলোঃ

 

রেজিষ্ট্রেশন আইনের প্রকৃতিঃ 

জেরিমি বেনথামের মতে সাবস্টেন্টিভ অথবা এ্যাডজেকটিভ ধরণের হইবে। প্রথমটি হচ্ছে মূল আইন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রথমটিকে বাস্তবায়ন করিবার পদ্ধতিগত আইন, দ্বিতীয়টি আদালত পরিচালনার পদ্ধতি, পক্ষগণের উপর সমন জারীর পদ্ধতি, সাক্ষী ও দলিলাদি হাজির করিবার ইত্যাদি পদ্ধতির বিষয় বর্ণনা করে। এই আইনকে কার্যকরী করার জন্য বিধিমালা প্রণয়নের বিধান এই আইনে রয়েছে। এই আইনটি রেজিষ্ট্রি দ্বারা দলিলের সত্যতা সম্পর্কে মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মায়।

 

রেজিষ্ট্রেশন আইনের উদ্দেশ্যঃ 

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সম্পত্তি সম্পর্কিত স্বত্ত্বের জার দলিল প্রণয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করা এবং দলিলের যথার্থতা সম্পর্কে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা বিধান করাই রেজিষ্ট্রেশন আইনের উদ্দেশ্য। জালদলিল ও মিথ্যা স্বাক্ষী দ্বারা সমর্থিত মিথ্যা দাবির উপর প্রতিষ্ঠিত এরূপ সম্পত্তি বিষয়ক মামলা প্রতিরোধ করবার অভিপ্রায়েই এই আইনের সৃষ্টি হয়েছে। রেজিষ্ট্রীকরণের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হইল, স্থাবর-সম্পত্তির ক্রেতাদের স্বত্ত্বের অবস্থা নির্ণয়ের অবলম্বন প্রদান করা। রেজিষ্ট্রীকরণের উদ্দেশ্য হইল-স্বত্ত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করা ও জাল-জালিয়াতি ও গোপনীয় আদান-প্রদান প্রতিরোধ করা এবং একটি সম্পত্তিতে একজন ব্যক্তির এরূপভাবে অর্জিত স্বত্ত্ব পরাভূত করা। রেজিষ্ট্রীকরণ পদ্ধতি স্বত্ত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করছে। কারণ মূল দলিল হারিয়ে গেলে বা বিনষ্ট হলেও স্বত্ত্ব হায়ায় না বা নিবষ্ট হয় না। রেজিষ্ট্রীকরণ আই স্বত্ত্ব প্রমাণ করবোর সুযোগের বিধান রেখেছে। রেজিষ্ট্রেশন আইন কর্তৃক দলিলের রেজিষ্ট্রী বাধ্যতামূলক করেছে। রেজিষ্ট্রীযোগ্য দলিল রেজিষ্ট্রী ব্যতীত বৈধ নয়, এরূপ দলিলের বৈধতা নির্ধারণের প্রয়োজনে বা সাক্ষ্যে গ্রহণযোগ্যতা আণয়নের জন্য রেজিষ্ট্রীর আবশ্যক হয় না। একই সম্পত্তি সম্পর্কিত একটি রেজিষ্ট্রীকৃত এবং অন্যটি রেজিষ্ট্রীবিহীন দলিলের মধ্যে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রথমটিই শক্তিশালী হয়। তেমনি রেজিষ্ট্রীকৃত উইল ব্যতীত অন্য সকল প্রকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কিত দলিল ঐ সম্পত্তি বিষয়ক অপর কোন মৌখিক চুক্তি বা ঘোষণা অগ্রাহ্য করে বলবৎ হবে। শুধুমাত্র যে সকল ক্ষেত্রে মৌখিক চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বা অব্যাবহিত পরেই সম্পত্তির দখল হস্তান্তরিত হয়, সে ক্ষেত্রে এইরূপ ব্যবস্থা প্রচলিত বিধান অনুসারে আইনানুগ হবে। আইন আরো বিধান করেছে যে, একটি দলিল অবশ্যই রেজিষ্ট্রীকরণের জন্য যথাযথ রেজিষ্ট্রী অফিসে এবং সম্পাদনের তারিখ হইতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দাখিল করতে হবে। ইহার পর প্রথমতঃ রেজিষ্ট্রারী কর্মকর্তাকে অনুসন্ধান ও নির্ণয় করতে হয় যে, প্রশেড়বাক্ত দলিল সম্পর্কে আইনের বিধানাবলী প্রতিপালিত হয়েছে কিন, এবং দ্বিতীয়তঃ দলিলটি সম্পাদিত হয়েছে কিনা। যদি এই দুইটি বিষয়ে, তিনি সন্তুষ্ট হন, তবে তিনি দলিলটি গ্রহণ করে সঠিক বহি বাবালামে নকল করাবেন এবং দলিলে তাঁর অফিসের মোহরাঙ্কিত এবং তাঁর স্বাক্ষর যুক্ত পূর্বক তা রেজিষ্ট্রী করা হয়েছে এই প্রত্যায়ন প্রদান করে দাখিলকারক বা তাহার প্রতিনিধিকে দলিলটি ফেরত দিবেন। উইল ব্যতীত স্তাবর সম্পত্তি বিষয়ক দলিলের বহি বা বালাম সর্ব-সাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত। সংক্ষেপে উপরোক্ত বিষয়াবলী রেজিষ্ট্রীকরণ আইনের প্রধান প্রধান বিধান। রেজিষ্ট্রীকৃত

দলিলের মাধ্যমেই স্থাবর সম্পত্তির আদান প্রদান কার্যকর হবে। এই আইনে এমন কোন বিধান সৃষ্টি করে নাই। যাহা প্রয়োজন হচ্ছে-স্থাবর-সম্পত্তি বিষয়ক কতক দলিল অবশ্রই রেজিষ্ট্রী করতে হবে এবং সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত একটি রেজিষ্টারে এরূপ রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলসমূহ নকল করে রাখতে হবে। উপরোক্ত আলোচনা হতে রেজিষ্ট্রেশন আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব-যাহার সার-সংক্ষেপ এরূপঃ

(১) দলিলের যথার্থতা সম্পর্কে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা বিধান করা;

(২) আদান-প্রদানের প্রচার প্রদান করা;

(৩) জাল-জালিযাতি প্রতিরোধ করা;

(৪) একটি সম্পত্তির ইতিপূর্বে কোন বিধি-ব্যবস্থা হয়েছে কিনা উহা নির্ণয়ের সুযোগ প্রদান করা; এবং

(৫) স্বত্ব-দলিলের নিরাপত্তা বিধান করা এবং মূল দলিল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে স্বত্ব প্রমাণের সুযোগ বিধান করা।

রেজিষ্ট্রেশন আইন সৃষ্টির এই উদ্দেশ্যসমূহ যদি যথাযথভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হয়, তবে আইন প্রণয়নের দুই শতাব্দী কাল পরেও রেজিষ্ট্রেশন আইন আজ যে বিকশিত অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় উহা সঠিকভাবে অনুসরণ করলে, আইন সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিকট এই আইনের বিভিনড়ব ধারার তাৎপর্য স্পষ্টভাবেই প্রতিভাত হবে।

 

রেজিষ্ট্রেশন আইনের ক্রম বিকাশঃ 

১৭৮১ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় জর্জের আমলে রেজিষ্ট্রেশন আইন সর্বপ্রথম বঙ্গীয় বিধিবদ্ধ আইন নামে প্রাদেশিক আইন হিসেবে জন্মলাভ করে। উক্ত আইনের ১৪ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ত্রিবিধ ক্ষমতা নিযে যথা- দলিল, রেজিষ্ট্রীকরণ, জরীপকরণ ও নামজারীকরণের প্রথম রেজিষ্ট্রার মিঃ এডওয়ার্ড টিরেটা নিয়োগ লাভ করেন। পরবতৃীকালে ইংরেজ শাসকদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিস্তারিত আইন প্রণয়ন ও উক্ত ত্রিবিধ ক্ষমতা পৃথকীকরণের তাগিদে ১লা মে, ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দে প্রণীত আইন পূর্ববর্তী আইনের সাথে সঙযোজিত হয়। ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দেই সর্বপ্রথম হিন্দুদের ‘দত্তক’ গ্রহণ ও সম্পত্তি উইল করার বিধান প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের আওতায় সর্বপ্রথম কলকাতার বাইরে ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও পাটনায় তিনটি পৃথক রেজিষ্ট্রী অফিস স্থাপন করা হয় এবং অফিসগুলোর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয় দেওয়ানী আদালতের রেজিষ্ট্রার এর উপর। প্রকৃতপক্ষে এই আইনের বিধানসমূহ রাণী এ্যানের রাজত্বকালে ইয়র্ক শ্যায়ারের রেজিষ্ট্রেশন আইনের অনুকরণে প্রণীত হয়। পরবর্তীকালে ১৭৯৩ সালের বিধানাবলীকে সমৃদ্ধ, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সময়োপযোগী করার জন্য বিভিনড়ব সময নতুন আইনের সংযোজন ও পুরাতনের সংশোধন করা হয। তখনই কাজিউল কাজ্জাত (Head Kazi of Bengal) -এর পদ সৃষ্টি করে বাংলা, বিহার ও ঊড়িষ্যার বেশ কিছু সংখ্যক জেলায় নিয়োগ করে তাঁদের অধিক্ষেত্রভূক্তি দলিলাদি সংরক্ষণ ও অনুলিপি সরবরাহ করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৭৯৩ সালের সামগ্রিক বিধানাবলী ১৮০৩ সালে পুনরায় বিধিকরণ করে সাধারণ আইনের অন্তর্ভূক্ত করা হয় যা ১৮০৫ সালে ঊড়িষ্যার কটক অবধি বিস্তৃতিলাভ করে। ১৮৩৮ সালে সর্বপ্রথম উপ-রেজিষ্ট্রার (Suv- Registrar) -এর অফিস প্রতিষ্ঠার আইন প্রণয়ন করা হয়। ১৮৪৩ সালে প্রণীত আইনের দ্বারা রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলসমূহকে অরেজিষ্ট্রীকৃত (Un-Registered) দলিলাদির তুলনায় অগ্রাধিকার দেয়ার সুস্পষ্ট বিধান রাখা হয়। এরপর ১৮৪৭, ১৮৫১, ১৮৫৬, ১৮৫৯ সালে রেজিষ্ট্রেশন আইনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিভিনড়ব ক্ষেত্রে সময়োপযোগী করে

সংশোধন করা হয়। এরপর ১৮৬৪ Act XVI সালে দ্বারা সর্বপ্রথম ১৭৯৩ সালের প্রাদেশিক বিধানাবলীকে বাতিল করে General Registration Act প্রণয়নকরত ১লা জানুয়ারী, ১৮৬৫ সাল হতে কার্যকর করা হয়। ১৯৬৬ সালে সংযোজিত নতুন আইন দ্বারা রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতির এক আমূল পরিবর্তন করে দলিল দাখিল করার বিধান প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে ১৮৭১ সালে Registrar General -এর পদ বাতির করে নতুন ও বর্ধিত দায়িত্ব দিয়ে Inspector General of Registration -এর পদ সৃষ্টি করা হয়। এভাবে ১৮৬৫, ১৮৬৬,১৮৬৮, ১৮৭১, ১৮৭৭, ১৮৭৯, ১৮৮৩, ১৮৮৬, ১৮৮৮, ১৮৮৯, ১৮৯১ ও ১৮৯৯ সালে বিভিনড়ব আইন প্রণয়ন করে মূল আইনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে যুগের চাহিদা মেটানো হয়। সর্বশেষ ১৯০৮ সালে পূর্বের সকল বিক্ষিপ্ত আইন ও বিধানগুলোকে সংকলিত করে বর্তমান রেজিষ্ট্রেশন আইন Act XVI প্রণয়ন করা হয়।

 

রেজিস্ট্রেশন প্রশাসন 

রেজিষ্ট্রেশন কার্য পরিচালনার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি রেজিষ্ট্রেশন পরিদফতর রয়েছে। সরকারকে রেজিষ্ট্রেশন পরিদফতরের প্রধান কর্মকর্তা হিসাবে একজন অফিসার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যিনি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিষ্ট্রেশন সংক্ষেপে আই.জি.আর. নামে অভিহিত হবেন। সরকারকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে সরকার ইন্সপেক্টর জেনারেলের নিয়োগের পরিবর্তে অন্য কোন অপিসার নিয়োগ করতে পারবেন যিনি ইন্সপেক্টর জেনারেলের উপর অর্পিত ক্ষমতা ও কর্তব্যের সবগুলি বা যে কোন একটি নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে পরিচালনা করবেন। বর্তমানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন জেলাগুলিকে এই রেজিষ্ট্রেশন পরিদফতরের আওতার বাহিরে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল আছেন যিনি সাধারণতঃ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পর্যায়ের অফিসারগণের মধ্য হতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। ইন্সপেক্টর জেনারেলের অধীনে বর্তমানে একজন সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল, দুইজন রেজিষ্ট্রি অফিসসমূহের পরিদর্শক, ঊনপঞ্চাশ জন জেলা রেজিষ্ট্রার, চারশত পঁচাত্তর জন সাব-রেজিষ্ট্রার, অবকাঠামোভূক্ত কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

৯.১.১ সম্পত্তি ক্রয়পূর্ব প্রস্ত্ততি 

মালিকানা স্বত্বের তদন্ত ও তল্লাশীঃ 

সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে ক্রয়েচ্ছু সম্পত্তির স্বত্বের তদন্ত ও তল্লাশী। স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিক্রেতার নিকট হতে প্রাপ্ত স্বত্ব সম্পর্কীয় দলিলাদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বিক্রেতার বর্তমান মালিকানা স্বত্ব কিরুপে কবে এবং কতখানি বর্তাইয়াছে দেখতে হবে। বিক্রেতা যদি ওয়ারিশানসূত্রে সম্পত্তির মালিক হন তাহা হলে তার পূর্ববর্তী মালিকদের ধারাবাহিক ও বৎসরানুক্রমিক একটি তালিকা প্রস্ত্তত করা আবশ্যক। তদন্ত করে দেখতে হবে বিক্রেতার পুর্ববর্তী মালিকের এই সম্পত্তিতে বৈধ মালিকানা স্বত্ব ছিল কিনা। কিংবা থাকলেও সময় প্রবাহে তাদের মালিকানা স্বত্ব কোনরূপ খর্ব হয়েছে কিনা। ওয়ারিশানসূত্রে প্রাপ্ত বিক্রেতার সম্পত্তির উপর অন্য কোন ওয়ারিশানের হক আছে কিনা এবং তাকলে ছাহাম বন্টন হয়েছে কিনা। বিক্রেতা খরিদসূত্রে বিক্রয়েচ্ছু সম্পত্তির মালিক হলে, সে যার নিকট হতে সম্পত্তি খরিদ করেছে তাহার বৈধ মালিকানা-স্বত্ব ছিল কিনা এবং থাকলে সঠিক রেজিষ্ট্রি করে স্বত্বান্তর করা হয়েছে কিনা। বিক্রেতার মালিকানা-স্বত্ব সম্পর্কীয় চেক, পরচা, নকশা ইত্যাদি পরীক্ষার পর সম্পত্তিসম্পর্কীত ইতিপূর্বে সম্পাদিত দলিল দস্তাবেজ যাহাকে ‘বায়া দলিল’ বলে পরীক্ষা করতে হবে। ইতিপূর্বে দলিল দস্তাবেজ বলতে মূল দলিল, বন্টননামা, হেবা-নামা, সালিশী আদালতে হুকুমজারী, ট্রাস্ট দলিল, ওয়াকফ্নামা, স্বত্ব প্রত্যার্পণ সম্পর্কিত কোন দলিলাদি, উইলের প্রবেট ইত্যাদি বোঝায়। বিক্রেতার স্বত্বের প্রমাণ হিসাবে দেওয়ানী আদালতের রায়ের কপি নামজারীর সইমোহরী কপি, সরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত কর বা খাজনার রসিদপত্র ইত্যাদি যাচাই

করে দেখা উচিত।  

 

দখলী স্বত্বঃ 

দলখ মালিকানা স্বত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিক্রেতাকে সম্পত্তির উপর গিয়ে সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে বিক্রেতার সম্পত্তির উপর কার্যকরী দখল আছে কিনা। সম্পত্তিটি যদি অন্য কাহারও দখরে থাকে তাহা হলে দখলকাররা কেন, কতদিন ও কি সূত্রে দখলে আছে এবং তাহা বিক্রেতার স্বত্ব ক্ষুনড়বকারক কিনা যাচাই করা উচিৎ।

 

 

তল্লাশীঃ 

ক্রেতার ক্রয়েচ্ছু সম্পত্তি তল্লাশী করা একান্তভাবে আবশ্যক। যে রেজিষ্ট্রেশন অফিসের এখতিয়ারভূক্ত এবং রাজস্ব দফতরে সম্পত্তিটির কাগজপত্র সংরক্ষিত হয়, এই উভয় স্থানে তল্লাশী করা উচিত। বিক্রেতা তার স্বত্ব প্রমাণের জন্য যে সকল কাগজ ও দলিলাদী উপস্থাপন করে তা সঠিক কিনা সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হওয়া যায়।

 

রাজস্ব দফতরঃ 

রাজস্ব দফতরে তল্লাশী বলতে কালেক্টরেট, রাজস্ব সার্কেল অফিস, সাব-ডিভিশনাল ম্যানেজার অপিস ও তহশিল অফিসে, যেখানে সম্পত্তিটির খাজনা প্রদত্ত হয় অনুসন্ধান করা বোঝায়। এই সমস্ত দফতর তদন্ত করে এবং সইমোহরী কপি নিয়ে দেখতেহবে সম্পত্তিটি বিক্রেতার নামে আছে কিনা। অবশ্য মনে রাখা আবশ্যক যে রাজস্ব দফতরে রক্ষিত কাগজপত্রের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে এবং মালিকের নামজারী করিয়াও চেক পরছা পাইতে অনেক সময় বিলম্ব হয়ে থাকে। এই ভুলভ্রান্তি বা বিলম্ব হেতু মালিকানা-স্বত্ব না লোপ পেয়েছে এরূপ ধারণা করা ঠিক হবে না, যদি পর্যায়ক্রমে মালিকানা-স্বত্ব ও দখল সঠিক বলিয়া গণ্য হয়ে থাকে।

 

রেজিষ্ট্রেশন অফিসঃ 

বিক্রয়ে ইচ্ছুক সম্পত্তিটি যে রেজিষ্ট্রেশন অফিসের এখতিয়ারভূক্ত সেই অফিসে তললাশী দিয়ে পরীক্ষা করা যায়, সম্পত্তিটি ইতিপূর্বে একই বিক্রেতা বা অন্য কাহারও দ্বারা বিক্রয় হয়েছে কিনা। রেজিষ্ট্রেশন অফিসে তল্লাশী করবার নিমিত্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকে, এসব ব্যক্তিকে ‘সার্ভার’ বলা হয়। দাগ নম্বর বা দলিলদাতার নামের আদ্যক্ষর রেজিষ্ট্রেশন অফিসের যে ইনডেক্সে থাকা সম্ভব। একজন সার্চার তল্লাশী করে বুঝতে পারবে দাগটি বিক্রয় হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে কতবার, কার দ্বারা এবং বর্তমানে কার নামে আছে ইত্যাদি। তল্লাশী ইচ্ছানুযায়ী যে কোন বৎসরের জন্য করা যায়, তবে স্থাবর সম্পত্তির তল্লাশী অনধিক বার বৎসরের জন্য করলে উত্তম হয়।

 

৯.১.২ বিভিন্ন প্রকার দলিল 

 

সাফকবালাঃ কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফাকবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবালা বলা হয়। এই কবালা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো। দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃস্বত্ববান হলেন।

 

দানপত্র দলিলঃ যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।

 হেবা দলিলঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা সর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।

 

হেবা বিল এওয়াজঃ এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তছবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোন

প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকা বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশী সূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা

 

বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে তা হলে শরীক কর্তৃক জানার তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান করতে পারে। 

 

এওয়াজ দলিল: যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন সরতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট। উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন দলিল বলে। এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।

 

বন্টনমানা দলিল: শরিকগণ মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।

 

অছিয়তনামা দলিল: কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মদ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলেই হবেন।

 

উইল দলিল: হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীবমানে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।

 

নাদাবী দলিল: কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে নাদাবী দলিল বলা হয়।

 

বয়নামা দলিল: প্রজাদের ভূমি রাজস্ব বাকী পড়লে উপরস্থ মালিকগণ আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা উক্ত ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে উক্ত খাজনার ডিক্রিজারী দিয়ে উক্ত ভূমি নিলাম করাতেন। উক্ত নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্ব সাধারণের খরিদ করবার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি অধিক টাকায় নিলামের ডাক উঠাতেন তিনি উক্ত নিলাম খরিদ্দার বলে গণ্য হতেন। খাজনার ডিক্রি ছাড়া আরও কয়েক প্রকারের নিলাম হয়ে তাকে যেমন সরকার কর্তৃক বাকী ভূমি রাজস্বের নিমিত্ত মানী মোকদ্দমার দাবীর ওদেওয়ানী মোকদ্দমার খরচের টাকার নিমিত্ত ও রেহানী ঋণের দরুন। যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শন পত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।

 

দখলনামা দলিল: বন্টনের মোকদ্দমা, স্বত্ব সাব্যস্ত পূর্বক খাস দখল, উৎপাত ও প্রিয়েমশান ইতা্যাদি মোকদ্দমায় ডিক্রির পর আদালত হতে বন্টনের মোকদ্দমায় কমিশনার ও অন্যান্য মোকদ্দমায় আদালতের পদাতিক বা নায়েব, নাজির যোগে ডিক্রির মর্মমতে দখলী পরওয়ানের ভিত্তিতে দখল গ্রহণ করিতে হয় এবং দখল দেওয়ার পর কমিশনার ও আদালতের পদাতিক বা নায়েব নাজির রিপোর্টসহ উক্ত দখলী পরওয়ানা আদালতে দাখিল করেন। তাকে দখলনামা দলিল বলা হয়।

 

রায় দলিল: কোন সম্পত্তি টাকা পয়সা কিংবা অন্যান্য যে কোন কারণে আদালতে নালিশ হলে বাদীর আরজি, বিবাদীর জবাব দৃষ্টে সাক্ষী প্রমাণ গ্রহণ করে একতরফা বা দোতরফা শুনানীর পর হাকিম বিচার করে উক্ত বিচার লিখিতভাবে জানিয়ে দেন তাকে

রায় বলা হয়।

 

ডিক্রি দলিল: রায়ের মর্মমতে রায়ের আদেশাংশ সংযোজন করে বাদী ও বিবাদী পক্ষের নাম ঠিকানাসহ সম্পত্তি সংক্রান্ত হলে সম্পত্তির তফসিল পরিচয়সহ একখানা দলিল আদালত কর্তৃক জারী করা হয় তাকে ডিক্রি বলে।

 

আরজি দলিল: বাদী বিরোধীয় ভূমির জন্য বিবাদীগণের বিরুদ্ধে আদালতে যে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন তাকে আরজি বলা হয়। এই আরজিতে বাদী তার স্বত্ব সম্বন্ধে যাবতীয় বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং প্রতিকার প্রার্থনা করেন। কোন কোন দরখাস্ত আরজি গণ্যে বিচার হয় যেমন প্রিয়েমশান অভিভাবক নিযুক্তির দরখাস্ত উত্তরাধিকার নিদর্শনপত্র, প্রবেট ইত্যাদি।

 

আদালত যোগে সাফকবলা দলিল:  

কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি বিক্রয় করবোর জন্য কারোও নিকট হতে বায়না বাবদ টাকা গ্রহণ করে বায়নাপত্র সম্পাদন করে দিয়ে যদি দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে না দেয় তাহলে যে ব্যক্তি বায়না দিয়েছেন তিনি আদালতযোগে নালিশ করে আদালত কর্তৃক দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করিয়ে নিতে পারেন। আদালতের বিচারে দলিল সম্পাদনের মোকদ্দমা ডিক্রি হলে উক্ত ডিক্রি ঐ আদালতে জারী দিয়ে দলিলের মুসাবিদা ও ষ্ট্যাম্প আদালতে দাখিল করলে তম্মর্মে দলিললিপি করে আদালত দাতার পক্ষে দস্তখত করে দলিল রেজিষ্টারী করে দিবেন।

 

বায়নাপত্র দলিল: কোন সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয় তাকে বায়নাপত্র বলে। বর্তমানে বায়না দলিল রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। বায়না পত্রের মাদ্যমেও স্বত্ব হস্তান্তরিত হতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি বায়নাপত্র মারফত জমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন এবং মূল্যের টাকা গ্রহণ করে থাকেন এবং বিশেষ কারণে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন নাই বা দিতে পারেন নাই। যেহেতু দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং গ্রহীতা দখল বুঝিয়ে নিয়ে ভোগ দখল করছেন সেহেতু সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩ ধারা মতে আংশিক বিক্রয় কার্যকরী হয়েছে। অতএব জমিতে খরিদ্দারের স্বত্ব হয়েছে বলে গণ্য হবে।

 

বেনামী দলিল: কোন ব্যক্তি বিশেষ কোন কারণে তার নিজের নামে সম্পত্তি খরিদ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া বিবেচিত হলে ঐ ব্যক্তি নিজ অর্থে ও স্বার্থে সম্পত্তি খরিদ করে তার দলিল নিজের নামে না করে তার যে কোন আত্মীয়ের বা বিশ্বাসী বন্ধু বান্ধবের নামে বেনামী দলিল করতে পারেন বা নিজের সম্পত্তি ঋণের দায়ে বা অন্য কোন কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ঐ ব্যক্তি তার নিজের সম্পত্তি কোন আত্মীয় স্বজনেবা বন্ধু বান্ধবের নামে দলিল করে দিতে পারেন। সেই দলিল অবশ্যই সাফকবালা ক্ষেত্র বিশেষে দানপত্র দলিল হবে।

 

 

 

৯.১.৩ রেজিষ্ট্রি দলিলের আবশ্যকীয় শর্তাবলী 

একটি রেজিষ্ট্রি দলিলে নিমড়ববর্ণিত শর্তাবলী পালন করতে হয় অন্যথায় দলিলটি স্বয়ং সম্পূর্ণ হবেনা:

১। শিরোনামঃ দলিলটি কো ধরণের দলিল তা প্রথম বর্ণনায় উলেলখ করতে হবে। যেমন: সাফকবলা, বায়নাপত্র আম- মোক্তারনামা ইত্যাদি।

২। পক্ষগণের পরিচয়ঃ দান গ্রহীতা, প্রথম পক্ষ, দ্বিতীয় পক্ষ ইত্যাদি। নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম, পিতার নাম, পেশা, ধর্ম, জাতীয়তা বাসস্থান ইত্যাদি। অর্থাৎ কোন কোন পক্ষের মধ্যে দলিলটি সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি হচ্ছে তার বর্ণনা।

৩। বিক্রীত স্বত্বের বর্ণনাঃ স্বত্বের ইতিহাস, পূর্বের দলিল নম্বর ইত্যাদি। অর্থাৎ বিক্রেতা সম্পত্তিটি কোন সূত্রে অর্জন করেছেন তার বিবরণ। তা নামে খতিয়ান ও জমা খারিজ আছে কিনা।

৪। পণঃ পণ ব্যতিরেকে কোন চুক্তি বৈধ হয় না। মনে রাখা আবশ্যক পনের লেনদেন স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী হতে হবে। অবাস্তর, অবিশ্বাস্য বা সন্দেহজনক পনের বিনিময়ে কোন সম্পত্তি হস্তান্তরিত হলে পরিনামে দলিলটি বাতিল হতে পারে।

৫। দখলঃ বিক্রিত সম্পত্তির দখল বুঝে দেওয়া হলো কিনা তা দলিলে উল্লেখ করতে হবে। দখল না বুঝে দিলে দলিলের প্রধান শর্ত অপূর্ণ রয়ে গেল।

৬। রক্ষিত শর্তাবলীঃ দাতা গ্রহীতার অর্জিত সম্পত্তির অধিকারসমূহের কিয়দংশ সংরক্ষিত রেখে দলিল সম্পাদন করতে পারেন।

৭। দন্ড বিষয়ক অংশঃ জমি জমার ক্রয় বিক্রয়ের ব্যাপারে প্রতারণার নজির ভুরি ভুরি রয়েছে। তাই প্রতারণামূলক কার্যের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসাবে দন্ড বিষয়ক ব্যবস্থাদির দলিলে লিপিবদ্ধ রাখতে হয়।

৮। তারিখঃ দলিলে অবশ্যই তারিখ থাকতে হবে। দলিলে তারিখ না থাকলে উহা বাতিল বরে গণ্য হয়। বাংলা তারিখের সহিত ইংরেজি তারিখও দেওয়া উচিত।

৯। তফসিল বর্ণনাঃ বিক্রয়াধীন সম্পত্তির তফসিল বর্ণনা দলিলের নির্দিষ্ট অংশে উল্লেখ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইহাতে ভুল থাকলে সমস্ত দলিলের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হইতে বাধ্য। তফসিলে জমির পরিমাণ, মৌজা, থানা, রেজিষ্ট্রী অফিস, জেলা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির শ্রেণী, তৌজি, জমির চৌহদ্দি অর্থাৎ উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে ও পশ্চিমে অবস্থানকারীম ব্যক্তি ও সম্পত্তির নাম, খাজনা ও করের পরিমাণ সম্পত্তির কোন হোল্ডিং নম্বর ও ওয়ার্ড নম্বর থাকলে তাহাও দলিলে উল্লেখ করতে হয়।

১০। দস্তখতঃ দলিল দাতা দলিলের উপরিভাগ দক্ষিণ পার্শ্বে ও শেষ পৃষ্ঠায় নীচে স্বাক্ষর করবেন। কোন কোন দলিলে একাধিক পক্ষের দস্তখত দিতে হয়। দলিলে পক্ষগণের স্বাক্ষর বা টিপ পর্ব শেষ হবার পর দলিল লেখকের নাম, সাকিন ও দুই তিন জন সাক্ষীর নাম ও সাকিন লিখতে হবে।

১১। কৈফিয়তঃ দলিল লিখবার সময় কোন স্থানে ভূল, কাটা, মোছা বা অস্পষ্ট হলে উহার পৃষ্ঠা ও লাইন ক্রম উল্লেখ করে দলিলের শেষাংশে কৈফিয়ত হিসাবে তাহা লিখে দলিল লিখক তাহার নীচে সহি করবেন।

১২। বিবিধঃ দলিল পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নভাবে লিখিত হওয়া আবশ্যক। দলিল লিখতে ভাল কালি ব্যবহার করা দরকার। তবে বর্তমানে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ায় লিখিত দলিল খুব কমই রেজিষ্ট্রেশনের জন্য উপস্থাপিত হচ্ছে।

১৩। বিক্রেতার নামে খতিয়ান থাকতে হবে। বিক্রিত সম্পত্তির নক্শা ম্যাপ ইত্যাদি থাকলে তাহা অনুচ্ছেদ স্বরূপ মূল দলিলের সহিত যুক্ত করে দিতে হবে।

 

৯.১.৫ ভূমি বিষয়ক বিদ্যমান আইনে সর্বশেষ সংশোধন

রেজিষ্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪

(১) কোন সম্পত্তির মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন (সংশোধন) আইনের ১৭(১) ধারার বিধান অনুসারে বাটোয়ারা বা আপোস-বন্টননামা রেজিস্ট্রি করতে হবে।

(২) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রেশন (সংশোধণ) আইনের ১৭এ (১) ধারার বিধান অনুসারে অবশ্রই লিখিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।

(৩) বিক্রয় চুক্তি/বায়না চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে চুক্তিপত্রটি রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করতে হবে {ধারা ১৭এ (২)।

(৪) প্রতিটি হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে, রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রীত সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ এবং বিক্রয়ের প্রকৃতি বর্ণনা করতে হবে। {ধারা ২২এ(১)।

(৫) প্রতিটি দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের ছবি পেষ্ট করে সংযুক্ত করতে হবে, উক্ত ছবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর/বাম বৃদ্ধাঙ্গুলীর টিপসইযুক্ত হবে {ধারা ২২এ(২)।

(৬) সরকার এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে (দলিলের/চুক্তিপত্রের) নির্ধারিত ফরমেট জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবেন {ধারা ২২এ (৩)।

(৭) দলিল সম্পাদনের ৩ মাসের মধ্যে তা রেজিষ্ট্রির জন্য দলিল করতে হবে (যা পূর্বে ছিল ৪ মাস (ধারা ২৩)।

 

বিক্রয়ের বায়না চুক্তি, দান দলিল ও বন্ধক দলিল রেজিস্ট্রি ফিঃ

রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এ নতুন সংযোজিত ৭৮এ ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি, দান দলিল ও বন্ধক দলিল রেজিস্ট্রি ফি হবে নিমড়বরূপঃ

(এ) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফি হবেঃ

(i) সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়না/চুক্তিপত্রের জন্য ষ্ট্যাম্প শুল্ক মাত্র ১৫০ টাকা।

(ii) বিক্রয়তব্য সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশী না হলে ফি ৫০০ টাকা।

(iii) সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশী না হলে ফি ১০০০ টাকা।

(iv) সম্পত্তির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশী হলে ফি ২০০০ টাকা।

 

(বি) দান দলিল রেজিস্ট্রি ফিঃ

মুসলিম পারসোনাল ল’ (শরীয়ত) অনুসারে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বোন-বোন এবং সহোদর ভাই ও সহোদর বোনের মধ্যে যে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দান দলিল বা দান চুক্তি রেজিস্ট্রি ফি মাত্র ১০০ টাকা।

 

(সি) বন্ধক (Mortgage)চুক্তি রেজিস্ট্রি ফিঃ

সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ৫৯ ধারার বিধান অনুসারে-

(i) বন্ধবী অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে না হলে ফি বন্ধকী অর্থের ১% তবে ২০০ টাকার নিমেড়ব নয় এবং ৫০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।

(ii) বন্ধকী অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার উপরে কিন্তু বিশ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে না হলে ফি বন্ধকী অর্থের ০.২৫% (শূন্য দশমিক এক শূন্য শতাংশ) টাকা হারে তবে ৩০০০ টাকার কম নয় এবং ৫,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।

(iii) বন্ধকী অর্থের পরিমাণ বিশ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হরে সে চুক্তি রেজিস্ট্রি ফি লাগবে বন্ধকী অর্থের ০.১০% (শূন্য দশমিক এক শূন্য শতাংশ) টাকা হারে তবে ৩০০০ টাকার কম নয় এবং ৫,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।

 

সম্পত্তি হস্তান্তর (সংশোধন) আইন ২০০৪-এ নতুন সংযোজিত ধারাসমূহ হলোঃ

বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে নাঃ এ আইনের ৫৩ডি ধারার বিধান অনুসারে রেজিস্ট্রিকৃত বন্ধকভূক্ত সম্পত্তি বন্ধক গ্রহীতার লিখিত সম্মতি ব্যতীত পুনবন্ধক দেয়া যাবে না এবং বিক্রি করা যাবে না। এরূপ করা হরে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

বিক্রয় চুক্তি অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবেঃ

সম্পত্তি হস্তান্তর (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ৫৪এ ধারা অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় চুক্তি হবে লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ২১এ ধারার বিধান অনুসারে আদালতের মাধ্যমে চুক্তি বলবতের দুই শর্ত হলোঃ

(১) লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত বায়না ব্যতীত চুক্তি প্রবলের মামলা আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা যাবে না।

(২) বায়নার অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা না করলে মামলা দায়ের করা যাবে না।

 

রেজিস্ট্রিকারে যে সকল বিষয় সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট পেশ করতে হবেঃ

দলিল রেজিস্ট্রারিং অফিসার এ আইনে নতুন সংযোজিত ৫২এ ধারার বিধান অনুসারে বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপিত কোন দলিল রেজিস্ট্রি করবেন না যদি দলিলের সাথে নিমেড়বাক্ত তথ্যাদি সংযুক্ত না থাকেঃ

(এ) রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর বিধান অনুসারে প্রস্ত্ততকৃত সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান, বিক্রেতার নাম যদি তিনি উত্তরাধিকারসূত্র ব্যতীত অন্যভাব সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন।

(বি) প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান অনুসারে প্রস্ত্ততকৃত সর্বশেষ খতিয়ান, বিক্রেতার নাম বা বিক্রেতার পূর্বসূরীর নাম যদি তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে ঐ সম্পত্তি পেয়ে থাকেন।

(সি) সম্পত্তির প্রকৃতি।

(ডি) সম্পত্তির মূল্য।

(ই) চতুর্সীমা সহ সম্পত্তির নকশা।

(এফ) বিগত ২৫ বৎসরের মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

(জি) দাতা কর্তৃক এ মর্মে একটি হলফনামা (Affidavit) সম্পাদন করতে হবে যে তিনি উক্ত সম্পত্তি ইতোপূর্বে কারো নিকট বিক্রি করেননি এবং তিনিই দলিলে উল্লেখিত

সম্পত্তির মালিক (He has Lawful Title)।

 

তামাদি (সংশোধন) আইন ২০০৪ঃ

তামাদি (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর বিধান অনুসারে এ আইনের প্রথম সিডিউল ১ মোতাবেক বায়না চুক্তি বলবৎ হওয়ার পর তা ১ বৎসর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে অর্থাৎ পূর্বে যেখানে বায়না চুক্তি আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করার জন্য ৩ বৎসর পর্যন্ত সময় পাওয়া

যেত এখন সেখানে ১ বৎসর সময় পাওয়া যাবে। ১ বৎসর পর এরূপ চুক্তি আদালতের মাধ্যমে আর বলবৎ করা যাবে না।

 

দান এবং দান করার বিধানঃ

দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলে। কারো নিকট হতে প্রতিদান ব্যতীত অর্থাৎ বিনিময় ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করাই হলো দান। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপি এ্যাক্ট) এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তি দাতা কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোন ব্যক্তি ঐ সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাকে দান বলে।

 

দান বৈধ হওয়ার ৩ শর্তঃ

(১) দাতা কর্তৃক দানের (ইজাব) ঘোষণা প্রদান।

(২) গ্রহীতা তার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা।

(৩) দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান।

দানের উপাদান সমূহঃ

(১) দাতাকে সুস্থ মস্তিষ্কের সাবালক ব্যক্তি হতে হবে।

(২) দাতার জীবনকালের মধ্যে দান কার্য সম্পনড়ব হতে হবে।

(৩) দান গ্রহণের পূর্বে দাতার মৃত্যু হলে দান বাতিল বলে গণ্য হবে।

(৪) দানের সময় সম্পত্তিতে দাতার মারিকানা ও দখল থাকতে হবে।

(৫) দান স্বেচ্ছায় এবং পণবিহীন হতে হবে।

(৬) দান গ্রহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নাবালক হরে তার পক্ষে অভিভাবক দান গ্রহণ করতে পারবেন। দান যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন।

(৭) মুসলিম আইন অনুযায়ী দাতা তার সমুদয় সম্পত্তি যে কাউকে দান করতে পারেন। দায়ভাগ মতে একজন হিন্দু যাদের ভরণপোষণে আইনত বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখার পর বাকী সম্পত্তি দান করতে পারেন।

(৮) দখল হস্তান্তরের পূর্বে দান প্রত্যাহার করা যায়। দখল হস্তান্তরের পরে দান প্রত্যাহারের জন্য আদালতের ডিক্রি লাগবে।

(৯) দানকারী ঋণের দায় এড়ানোর বা অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে দান করলে, পাওনাদারের আবেদনে ঐ দান বাতিলযোগ্য হতে পারে।

(১০) মৃত্যুশয্যাকালীন দান উইলের ন্যায় কার্যকরী হবে অর্থাৎ ঐ দান অনাত্মীয়ের অনুকূলে করা যাবে কিন্তু মোট সম্পত্তির ১/৩ ভাগের বেশী দান করা যাবে না। তবে উত্তরাধিকারীগণের সম্মতি থাকলে অআত্মীয়কে ১/৩ ভাগের অধিক সম্পত্তি দান করা যাবে। এ অবস্থায় কোন উত্তরাধিকারীকে দান করা যাবে না।

(১১) রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ৭৮এ ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা অনুযায়ী দান লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।

(১২) অজাত ব্যক্তি বরাবরে দান করলে দানের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে সে জন্ম গ্রহণ কররে সে দান বৈধ হবে।

 

দান দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলকঃ

রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এ নতুন সংযোজিত ৭৮এ ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি হবে

নিমড়বরূপঃ

স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা-সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বো-বোন এবং সহোদর ভাই ও সহোদর বোনের মধ্যে যে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি ফি দিতে হবে মাত্র ১০০ টাকা। তবে উলিলখিত সম্পর্কের বাইরের

ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সম্পাদিত দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রির ফি হবে কবলা দলিল রেজিস্ট্রির জন্য প্রযোজ্য ফি’র অনুরূপ।

জীবন স্বত্ত্বে দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিঃ

স্প্যাম্প এ্যাক্ট ১৯০৮ এর ৫৮ নং আর্টিক্যাল অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান (মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) এর জন্য জীবন স্বত্ত্বে দানের বিধান হলো-যে প্রতিষ্ঠানের নামে সম্পত্তি দান করা হবে সে প্রতিষ্ঠান ঐ সম্পত্তি শুধু ভোগ-দখল করতে পারবে, সম্পত্তি কোনরূপ হস্তান্তর করতে পারবে না। এরূপ জমির ভূমি উনড়বয়ন কর পরিশোধ করতে হবে দানকারীর নামে। কোন কারণে ঐ প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর না থাকলে সম্পত্তি দানকারীর মালিকানায় চলে যাবে এবং দান দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। জীবন স্বত্ত্বের দান দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ২% স্ট্যাম্প ফি, ২.৫% রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ই ফিস লাগবে।

হেবা-বিল এওয়াজঃ

মুসলিম আইন অনুসারে কোন কিছু বিনিময় নিয়ে দান করাকে বলে এওয়াজ বা হেবাবিল-এওয়াজ। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ১১৮ ধারা অনুসারে দু’জন ব্যক্তি যে ক্ষেত্রে পরস্পর নিজেদের মালিকানাধীন কোন জিনিসের মালিকানা হস্তান্তর করে সেক্ষেত্রে

কোন একটি জিনিস টাকা না হলে সে আদান-প্রদানকে বলে এওয়াজ বা বিনিময়। এতে বিক্রয় চুক্তির উপাদান বিদ্যমান থাকায় এটি মূলত এক ধরনের বিক্রয়। এওয়াজ দলিলে বর্ণিত সম্পত্তির একজন দাতা তার নিজের সম্পত্তি অপরজনকে দেওয়ার পর তার প্রাপ্য সম্পত্তি তিনি না পেলে তিনি তার প্রদত্ত সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার অধিকারী হবেন। হেবা বিল এওয়াজ অগ্রক্রয়যোগ্য নয়।

 

হেবা-বিল-এওয়াজ এর উপাদানসমূহঃ

(১) গ্রহীতাকে হেবা গ্রহণের বিনিময়ে দাতাকে অবশ্যই কিছু দিতে হবে।

(২) দানের মাধ্যমে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিঃস্বত্বে পরিণত করতে হবে।

(৩) হেবা-বির এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল দান আবশ্যক নয়।

(৪) হেবা-বিল-এওয়াজ প্রত্যাহারযোগ্য নয়।

উইল বা অছিয়তের বিধানঃ উইল হলো ভবিষ্যৎ দান। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা সম্পত্তির মুনাফা কিভাবে বিলি-বন্টন করা হবে তা তার মৃত্যুর পূর্বেই লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারণ করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষণাই হলো উইল বা অছিয়ত।

 

উইলের শর্তঃ

(ক) মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান এ তিন সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকার আইনেরই বিধান হলো যে, সুস্থা মস্কিষ্কসম্পনড়ব যে কোন সাবালক ব্যক্তি উইল করতে পারবেন।

(খ) উইলকারীর ইচ্ছা সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে নির্ণয়যোগ্য হতে হবে।

(গ) উইল, উইল দাতার মৃত্যুর পর কার্যকর হবে।

(ঘ) উইল যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন।

উইলের উদ্দেশ্যঃ উইল করা যায় (ক) ব্যক্তির উদ্দেশ্যে এবং (খ) ধর্মীয় উদ্দেশ্যে। ব্যক্তির উদ্দেশ্যে উইল আবার দু’প্রকার (১) ওয়ারিশের বরাবরে উইল এবং (২) ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল।

ওয়ারিশের বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধানঃ

(ক) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।

(খ) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পূর্ণ কার্যকরী হবে।

(গ) ওয়ারিশদের সম্মতি কার্যকর হবে উইল দাতার মৃত্যুর পর।

 

ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তি বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধানঃ

(ক) ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পূর্ণ কার্যকরী হবে।

(খ) ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল দাতার নিট সম্পত্তির ১/৩ এর উপর উইল কার্যকরী হবে।

নিট সম্পত্তিঃ উইলদাতার মোট সম্পত্তি হতে নিমড়বরূপ ব্যয় পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি নিট সম্পত্তি বলে গণ্য হবে, উইল সর্বদা নিট সম্পত্তির উপর প্রযোজ্য হবেঃ

(ক) উইল দাতার মৃত্যুর অব্যবহিত ৩ মাস পূর্বের ভৃত্য বা চাকরের পাওয়ানাদি।

(খ) মৃত্যু শয্যাকালীন খরচাদি।

(গ) মৃত্যুর পর দাফন-কাফনের খরচ।

(ঘ) স্ত্রীর দেন-মোহরের পাওয়ানা পরিশোধ ব্যয়।

(ঙ) উইল প্রবেট এবং সাকসেশন সার্টিফিকেট ব্যয়।

(চ) ঋণ পরিশোধ (আগের ঋণ আগে পরিশোধ ভিত্তিতে)।

(ছ) ঋণ পরিশোধের আগে স্ত্রীর দেন-মোহর পরিশোধ করতে হবে।